তুখোড় মেধাবীরাই বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েটে চান্স পায় –এ ধারনা সাধারণ মানুষের। কথাটি অনেকাংশে সত্য। এইচএসসির পর যারা অপেক্ষাকৃত ভাল ছাত্র বা ছাত্রী তারা সহজেই বুয়েটে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করে । বুয়েটে যে ভর্তি পরীক্ষা হয় তা সম্পূর্ণ অন্যরকম। ৬০০ নম্বরের পরীক্ষা ৩ ঘন্টা সময়ের মধ্যে। এক সাথে পদার্থ, রসায়ন ও গণিত পরীক্ষা দিতে হয়। অনেকেই নার্ভাস হয়ে যায়। কিছু টিপস বা পরামর্শ মেনে চললে ভর্তি যুদ্ধে উত্তীর্ণ হওয়া কিছুটা সহজ হয়। বুয়েটে ভর্তি ইচ্ছুকদের কিছু জন্য নিচে কিছু টিপস আলোচনা করা হল:
যেহেতু বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় HSC এর পদার্থ, রসায়ন ও গণিতের আলোকে প্রশ্ন করা হয়, তাই HSC এর প্রথম বর্ষ থেকে এই তিন বিষয়ে ভাল করে বুঝে পড়তে হবে। এক্ষেত্রে বোর্ডের বই গুলোকে ভিত্তি হিসেবে নিতে হবে । প্রতিটি বিষয়ে দু’জন করে লেখকের বইয়ের প্রতিটি অধ্যায় ভাল করে আয়ত্ব করতে হবে।
যেহেতু একসাথে সব বিষয় পরীক্ষা দিতে হবে, তাই অনেক সময় ফর্মূলা ভুলে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু যদি ফলমূলাগুলো ধারাবাহিকভাবে ডেরাইভ করা হয়, তাহলে সব সময় প্রয়োজন মত ব্যবহার করা যায়। এতে সময় বেশি লাগলেও শেখাটা টেকসই হয়।
বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় থিওরিটিক্যাল বিষয়গুলোর পাশাপাশি পদার্থ ও রসায়নের গাণিতিক প্রশ্নগুলোতে একটু বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। বিগত বছরগুলোর প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে এটি বোঝা যায়। এর আরো একটি সুবিধা হল ডেরাইভকৃত ফর্মূলাগুলো আরো বেশি অনুশীলন হয়।
বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় বেশিরভাগ প্রশ্নই নতুন। নতুন প্রশ্ন পড়ে বোঝার চর্চা করতে হবে। এক্ষেত্রে একটি লেখকের বই সমাধান শেষ করে আরেকটি লেখকের বই সমাধান করলে উপকার পাওয়া যায়। অল্প সময়ে এধরনের দক্ষতা অর্জন করা কঠিন। ধারাবাহিকভাবে একাদশের শুরু থেকে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
যাদের লক্ষ্য প্রকৌশলী হওয়া বা যাদের প্রকৌশলে আবেগ (প্যাশন) আছে অথবা যারা গাণিতিক ও ব্যবহারিক সমস্যা সমাধান বেশি পছন্দ করে তাদের HSC এর পর বুয়েট ভর্তির প্রস্তুতি নেওয়া ভাল। যদি বুয়েটে চান্স নাও হয় অন্যান্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে অতি সহজে চান্স পেয়ে যাবে। এক সাথে ইঞ্জিনিয়িরিং, ভারসিটি ও মেডিক্যাল প্রস্তুতি নিতে গেলে প্রস্তুতি ভাল হয়না। ফলে বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
HSC বা A Level এর অনেকে প্রশ্ন করে, বুয়েটে ভর্তির জন্য কোন কোচিংএ ভর্তি হওয়া উচিত । কোচিংএ ভর্তি হওয়া বাধ্যবাধকতা নেই। নিয়ম করে একাএকা ভালভাবে পড়াশুনা করলে এমনিতেই বুয়েটে চান্স পাওয়া যায়। তবে আমার পরামর্শ হল- যেকোন একটি কোচিং এর সাথে এটাচমেন্ট থাকলে আপডেটেড থাকা যায়। অনুশীলন করা যায় নিয়মিত এবং নিজেকে একটি নিয়মের মধ্যে রাখা যায়। তবে বাসা থেকে কোচিং এর দূরত্ব যাতে কম হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। কোচিংএ যাতায়াত করতে গিয়ে অনেক সময় নষ্ট হলে হিতে বিপরীত হবে।কোচিং এর গতানুগতিক লেকচার সীট ও গাইডের উপর নির্ভরতা কমিয়ে টেক্স বইগুলোতে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
পদার্থ ও রসায়নের কিছু অধ্যায় আছে যেগুলো সাধারণত বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন প্রায় প্রতি বছর আসে, সে অধ্যায়গুলো বার বার চর্চা করতে হবে। রসায়ন দ্বিতীয় পত্রের রাসায়নিক বিক্রিয়া লিখে লিখে অনুশীলন করা ভাল। গণিতের ইনটিগ্রেশন প্রচুর চর্চা করতে হবে। যে টপিকগুলো কম মনে থাকে সেগুলো বার বার অনুশীলন করতে হবে।
পুরো সিলেবাসের উপর একটি শক্ত দখল আনতে হলে HSC ফাইনাল পরীক্ষার পর কয়েকটি রিভিশন চক্র বা সাইকেল তৈরি করে রিভিশন করতে হবে।
চক্র#১: কিছু কিছু অধ্যায় তিন দিন পর পর রিভিশন করতে হবে।
চক্র#২: কিছু কিছু অধ্যায় এক সপ্তাহ পর পর রিভিশন করতে হবে।
চক্র#৩: কিছু কিছু অধ্যায় দুই সপ্তাহ পর পর রিভিশন করতে হবে।
চক্র#৪: কিছু কিছু অধ্যায় এক মাস পর পর রিভিশন করতে হবে।
এভাবে নিজের অবস্থা বুঝে বিভিন্ন রিভিশন সাইকেলের মাধ্যমে পড়লে পুরো সিলেবাসের উপর দক্ষতা তৈরি হবে। এ দক্ষতা মানসিক শক্তি বাড়িয়ে দিবে। প্রকৃত কনফিডেন্স অর্জিত হবে। বুয়েটে চান্স পাওয়ার সম্ভাবতা বেড়ে যাবে।
বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা যত কাছাকাছি আসবে তত সিরিয়াস হতে হবে। অনুশীলনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে হবে। বিষয় ভিত্তিক ও পূর্ণাঙ্গ মডেল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করা উচিত। এক্ষেত্রে কোন কোচিংএ গিয়ে বা অনলাইনের মাধ্যমে অংশ গ্রহণ করা যায়। অনলাইনে বুয়েট ভর্তির মডেল পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করার একটি প্ল্যাটফর্ম হল ExamHelpBd.com । এখানে সামান্য পেমেন্টের মাধ্যমে বাসায় বসে মডেল টেস্ট দেওয়া যায়।
বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার আগে অনেক পরিশ্রম করতে হয় তাই নিজেকে সুস্থ রাখা জরুরী। এজন্য নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার ও ঘুমের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
যারা পরীক্ষার হলে কিছুটা নার্ভাস হয়ে যায় তারা হালকা মেডিটেশন করলে ভাল ফল পাবে।
ভর্তি Form পূরণ ও জমা দেওয়ার কাজ খুব যত্ন সহকারে করা উচিত। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট যত্ন সহকারে রাখতে হবে।
এই লেখাটি ধৈয্য ধরে পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। এই লেখা পড়ে যদি সামান্যতম উপকার হয় তাহলে আমরা অত্যন্ত খুশি। আমরা আরো কৃতজ্ঞ হব যদি শেয়ার করার মাধ্যমে আরো অনেক বুয়েট ভর্তি প্রত্যাশীদের উপকার করা হয়। অবশেষে বুয়েট ভর্তি প্রত্যাশীদের জন্য শুভকামনা রইল।